টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ প্রাণীর শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয় এবং নারীর ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়, যদিও স্বল্প পরিমাণ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এটি প্রধান পুরুষ হরমোন যা শুক্রাশয়ের লিডিগ কোষ (Leydiq Cell) থেকে উৎপন্ন হয়। পুরুষের জন্য টেস্টোস্টেরন প্রজনন অঙ্গ যেমন শুক্রাশয় (Testis) বর্ধনের পাশাপাশি গৌণ বৈশিষ্ট্য যেমন: মাংসপেশি, শরীরের লোম বৃদ্ধি করে। পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।
স্বাস্থ্যগত প্রভাব: সাধারণত এন্ড্রোজেন প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর সংবলিত টিস্যুর বৃদ্ধি সাধন করে। টেস্টোস্টেরনের প্রভাবকে লিঙ্গিক (Virjlizing) এবং অ্যানাবলিক (Anabolic) এই দু ভাগে ভাগ করা যায়। মাংসপেশি বৃদ্ধি, হাড়ের ঘনত্ব (Density) বৃদ্ধি, হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে উদ্দীপনা করা। এসব অ্যানাবলিক কাজ। যৌন অঙ্গের পূর্ণতা প্রদান করা, বিশেষ করে ফিটাসের শিশ্ন এবং শুক্রথলি তৈরি এবং বয়ঃসন্ধিকালে কণ্ঠস্বর গাঢ় হওয়া, দাড়ি এবং বগলের চুল বৃদ্ধি, এসব এন্ড্রোজেনিক কাজ। এসবের অনেক কিছুই পুরুষের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য।
বয়ঃসন্ধির পূর্বে: শৈশবের পরে এন্ড্রোজেন লেভেল বৃদ্ধির লক্ষণীয় প্রভাব দেখা যায় ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই। যেমন:
১) বয়স্ক-টাইপ শরীরের গন্ধ।
২) যৌণীদেশে চুল।
৩) বগলে চুল।
৪) উচ্চতায় বৃদ্ধি।
৫) গোঁফ গজানো।
বয়ঃসন্ধিকালে: প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে বয়ঃসন্ধিকালিন প্রভাব দেখা যায়। ছেলেদের এই প্রভাব সচরাচর একটু দেরিতে হয়। কিন্তু! মেয়েদের রক্তে টেস্টোস্টেরনের পরিমান অনেক দিন থেকে বেশি মাত্রায় থাকলে এমনটি দেখা যায়। যেমন:
১) সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া। এটি ব্রণের কারণ হতে পারে।
২) ভগাংকুর (Clitoris) বর্ধিত হওয়া।
৩) যৌনীদেশের চুল নিচে উরু এবং উপরে নাভী পর্যন্ত বিস্তৃত।
৪) মুখমণ্ডলে চুল (জুল্পি, গোঁফ, দাঁড়ি)। মাথার চুল কমে যাওয়া।
৫) বুকে, বৃন্তের চারপাশে, নিতম্বের চারপাশে লোম।
৬) পায়ে পশম।
৭) বগলে চুল।
৮) মুখের উপরস্থ ফ্যাট কমে যাওয়া।
৯) পেশি বৃদ্ধি।
১০) গাঢ় কন্ঠস্বর।
১১) পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি।
১২) কাঁধ প্রসারিত, বুকের পাঁজর ফুলে যাওয়া।
১৩) হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তি এবং বৃদ্ধি রোহিত হওয়া।
প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর প্রভাব: টেস্টোস্টেরনের প্রভাব বয়স্ক নারীর তুলনায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আরো পরিষ্কারভাবে প্রমাণযোগ্য। কিন্তু! উভয়ের জন্যই দরকারী। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পরে হ্রাস পাওয়ায় এইসবের কিছু প্রভাব প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য টেস্টোস্টেরন ভূমিকা রাখে।
এটি সারটলি কোষ এর জিনকে সক্রিয় করে। শারীরিক শক্তি নিয়ন্ত্রক। পেশী গঠন করে। তবে, এর সন্তোষজনক মাত্রায় থাকা শুধু সাবালকত্ব প্রাপ্তি বা যৌবন কালের জন্যই নয়, সব সময়ের জন্য। এমনকি বৃদ্ধ বয়সের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সাবালকত্ব প্রাপ্তি ছাড়াও সাধারণ স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ, শরীর গঠন, যৌনক্রিয়া এবং অন্য সকল শারীরিক কর্মকাণ্ডের জন্য শরীরে পরিমিত মাত্রায় টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
উপরন্তু, আপনার টেস্টোস্টেরনের মাত্র বৃদ্ধি হতে পারে দ্রুত মাংসপেশি এবং জীবনীশক্তি লাভের কারণ। যা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, এটি নারীদের সুস্বাস্থ্য এবং যৌনতার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা বেশ জোরালোভাবেই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরেই পরিমিত মাত্রায় টেস্টোস্টেরন থাকা উচিত। বিশেষ করে ১৩ বছর বয়সে তো এটি অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
২৫-৩০ বছর বয়স থেকেই একজন মানুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে। এটা একটা সমস্যা। কারণ! গবেষণায় এটা জোরালোভাবে দেখা গেছে যে, স্বল্প মাত্রায় টেস্টোস্টেরনের সাথে স্থূলতা বা মেদবাহুল্য, রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং অকাল মৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় আরো পাওয়া যায়, এটি নারীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অন্যান্য প্রধান হরমোন যেমন: এস্ট্রাজেন এবং প্রজেস্টেরনের পাশাপাশি টেস্টোস্টেরনের লেভেলও যথেষ্ট মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত টেস্টোস্টেরনের লেভেল সর্বোচ্চ মাত্রায় রাখা। তাদের জীবনধারায় বা লাইফস্টাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
হরমোন বৃদ্ধি করে যেসব খাবার: হরমোন বৃদ্ধি করার জন্য আপনারা যেসকল খাবার গুলো নিয়মিত খেতে পারেন সে গুলো হলো:
১) ডিমের কুসুম। ২) অলিভ অয়েল।
৩) নারকেল তেল। ৪) সেলারি।
৫) লাল মাংস। ৬) কড লিভার তেল।
৭) ব্লুবেরি। ৮) অ্যাভোকাডো।
৯) লাল আঙ্গুর। ১০) ঝিনুক বা শুক্তিসমূহ।
১১) গোমাংস ও যকৃত। ১২) কুমড়ো বীজ।
১৩) মটরশুটি। ১৪) অ্যাসপারাগাস।
১৫) Chia বীজ। ১৬) ডুমুর।
১৭) আনারস। ১৮) ওটমিল।
১৯) পোল্ট্রি। ২০) Brussel অঙ্কুরিত।
২১) কাঁচা চকলেট। ২২) ব্রাজিল বাদাম।
২৩) কলা। ২৪) রসুন।
২৫) ব্রকোলি। ২৬) পেঁয়াজ।
২৭) আদা। ২৮) ডালিম।
২৯) পার্সলে। ৩০) গোলমরিচ।
৩১) Sauerkraut. ৩২) দধি।
৩৩) Mangosteen. ৩৪) কেলপ।
৩৫) তরমুজ। ৩৬) শাক।
৩৭) বাঁধাকপি। ৩৮) প্রানী হার্ট।
৩৯) বিছুটি রুটস। ৪০) মধু।
৪১) কিশমিশ। ৪২) কাজু বাদাম।
৪৩) উচ্চ মানের লবণ বা হিমালয় ক্রিস্টাল লবণ। ৪৪) স্যামন।
৪৫) টুনা।
সূত্র: অথরিটি নিউট্রিশন।
0 Comments