ঢাকার কাছে কিন্তু! একটু দূরে বেড়ানোর জায়গা হিসেবে এক সময় সুখ্যাতি ছিল কুমিল্লার। স্কুলের পিকনিক হবে? কোথায়? কুমিল্লায়। পরিবারের সবাই মিলে দিনে ঘুরে আবার দিনেই ফিরতে চান? কোথায় যাবেন? কুমিল্লায়। তবে, জনপ্রিয় কুমিল্লার বিশেষ আকর্ষণ ময়নামতিতে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া আর কোনো জায়গা না পেয়ে দ্রুতই এটি লোক সমাগম হারাতে শুরু করে। এখন ব্যাপারটা এমন যে, কুমিল্লা বেড়াতে যাব? গিয়েছি আগেই! আসলে ময়নামতি যাওয়া হয়েছে আপনার। কুমিল্লায় আছে এমন আরও অনেক জায়গা যা আমরা জানিই না যা দেখতে অন্তত ২/৩ দিন সময় নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। অবাক হলেন তো? আসুন জেনে নিই কি কি আছে কুমিল্লায়:
১) বার্ড
নাম বার্ড। মনে হয় যেন অনেক পাখির দেখা মিলবে এখানে। কিন্তু! না। এটি একটি প্রশিক্ষণ একাডমি। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। বিভিন্ন পেশার মানুষেরা তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন এখানে। তবে জায়গাটি খুব সুন্দর। যেমন ছায়া ঘেরা, তেমন শান্ত সুনিবিড়। বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ড. আখতার হামিদ খান।
অবস্থান: কুমিল্লা টমছম ব্রিজ থেকে কোটবাড়ির সিএনজিতে উঠুন। বার্ডে নামবেন বললেই হবে। তবে, যাওয়ার আগে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে যাবেন। জাতীয় দিবসগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও এমনিতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।
২) ওয়ার সিমেট্রি
সমাধিক্ষেত্রে কোনো দেখার জায়গা নয়। তবে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নিমিত্তে যেতে পারেন এখানে। ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই সময়কালের মধ্যে অর্থাৎ ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের সমাধিক্ষেত্র এটি। ৭৩৭ জন শহীদের মরদেহ সমাধিস্ত করা হয়েছিল এখানে। জায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ করে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট সেনাবাহিনী। শহীদদের সবার সয়স ছিল মাত্র ২০ থেকে ২২ বছর। তরুণ সাহসী বীর সন্তানেরা জীবনের শুরুতেই যেন ঝরে গেছে, যুদ্ধে উৎসর্গ করে গেছে নিজেদের প্রাণ।
অবস্থান: কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের তিন রাস্তার মোড়ের দক্ষিণে সুপার মার্কেটের বিপরীতে রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন সমাধিস্থলটি। অর্থাৎ সিলেটগামী সড়কে ১০ মিনিটের মতো হাঁটলেই পেয়ে যাবেন জায়গাটি। পথ চিনতে সমস্যা হলে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তবে, ওয়ার সিমেট্রি না বলে বলবেন ইংরেজ কবরস্থান। তাহলেই দেখিয়ে দিবে।
আর আপনি যদি কুমিল্লা কান্দির পাড় থেকে আসেন তাহলে লোকাল সিএনজি করে শাসনগাছা আসবেন। এখান থেকে মাইক্রোবাস বা লেগুনায় করে সরাসরি চলে আসবেন ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট।
৩) রূপসাগর
সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি পার্ক এটি। সবুজ ছায়া ঘেরা পার্কটি নিমিষেই দূর করে দেয় সকল ক্লান্তি। শিশুদের নিয়ে বেড়ানোর জন্য চমৎকার একটি জায়গা। মাঝে বন্ধ থাকলেও পার্কটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দূরে ছোট ছোট পাহাড় পার্কের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। মাঝে আছে একটি লেক। বড় একটি ক্যাফেটোরিয়া আছে যেখানে পাবেন সুস্বাদু খাবার।
অবস্থান: কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তা অর্থাৎ যে সড়কটি ঢাকার দিকে এসেছে সেদিকে ১০ মিনিট হাঁটলেই পাবেন নাজিরা বাজার। এখান থেকে সেনাবাহিনী চেকাপ পয়েন্টের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। লেগুনায়ও যাওয়া যাবে। আর আপনার সহায়তায় স্থানীয় লোকজন তো আছেই।
৪) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার অবদান, কুমিল্লা সেক্টরের নানান কার্যাবলিসহ যুদ্ধের নানান ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর।
অবস্থান: রূপসাগর পার্কের কাছেই এর অবস্থান। সেখান করা স্থানীয় যে কোন লোককে জিগাসা করলে দেখিয়ে দিবে।
৫) রাণীর বাংলো পাহাড়
যে রাণী ময়নামতির নামে খ্যাত কুমিল্লা তার বাংলো এটি। লালমাই-ময়নামতি পাহাড়শ্রেণী থেকে বিচ্ছিন্ন জায়গাটি। সমতল থেকে উচ্চতা ১৫.২৪ মিটার। প্রথম নির্মাণ যুগে এটি ক্রুশাকার মন্দির ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে কিছু অলংকৃত ইট ও পোড়ামাটির ফলক উন্মোচিত হয়েছে। এই জায়গাটিকে ময়নামতির প্রাসাদও বলে।
অবস্থান: ওয়ার সিমেট্রি দেখে ঐ পথেই সিএনজি বা অটোতে করে যেতে পারবেন রাণীর বাংলো পাহাড়। বলবেন, ময়নামতি পাহাড় যবো তাহলেই হবে।
৬) রেশম উন্নয়ন কেন্দ্র
রেশম পোকা থেকে চমৎকার সুন্দর আর দামী কাপড় তৈরি হয় এটা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু! প্রক্রিয়াটা দেখা হয় নি বেশিরভাগ মানুষেরই। এখানে দেখতে পারবেন পুরো প্রক্রিয়াটিই। ভালো লাগবে আশা করি।
অবস্থান: রানীর বাংলো পাহারের কাছেই এর অবস্থান।
৭) ধর্মসাগর
ধর্মসাগর একটি দিঘীর নাম। ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজ ধর্মানিক্য ১৪৫৮ সালে এই দিঘী খনন করেছিলেন। প্রজাদের পানির অভাব মেটাতেই ছিল এই উদ্যোগ। রাজার নামেই তাই হলো দিঘীর নাম। দিঘীর একপাশে সেই সময়ের তাম্রলিপির দেখা পাবেন আপনি। বিশ্রামের জন্য বাঁধানো আছে বেদী যার নাম অবকাশ।
অবস্থান: এটি কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থীত। কান্দির পাড় থেকে হেটে অথবা রিকসা, সিএনজি তে সহজেই যেতে পারবেন।
৮) সবুজ অরণ্য পার্ক বা কুমিল্লা সিটি পার্ক
দিঘীতে বেড়ানো শেষে ঘুরে আসুন পাশের সবুজ অরণ্য পার্ক। ড. আখতার হামিদ খানের বাংলো আছে এখানে যা রাণীর কুটির নামের পরিচিত। এছাড়াও আশেপাশেই আছে ধীরেন্দ্রণাথ দত্তের বাড়ি, বিপ্লবী অতীন্দ্র মোহন সেনের বাড়ি। কাজী নজরুল ইসলামের কুমিল্লা অবস্থানকালের নানান স্মৃতিময় নিদর্শন দেখতে পাবেন এখানে। সবুজে ঘেরা পার্কটি মন ভালো করে দেবে আপনার।
অবস্থান: এটি ধর্মসাগর এর পাশেই অবস্থিত।
৯) বিনোদন কেন্দ্র ফান টাউন
২০১৬ সাল অর্থাৎ গত বছরই নতুন চালু হওয়া বিনোদন কেন্দ্র এটি। নানান রকম রাইড, কৃত্রিম ঝর্ণা, ১৫টি সিনেমা হল সব মিলিয়ে শিশুদের নিয়ে মজার সময় কাটাতে চাইলে দারুণ একটি জায়গা এটি। টিকিট মূল্য-৫০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতি রাইডের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা।
অবস্থান: কুমিল্লা টমছম ব্রিজ থেকে অটোরিকশায় আসতে হবে কুমিল্লা এয়ারপোর্ট রোড। ফান টাউন বললেই নামিয়ে দিবে আপনাকে। ধর্মসাগর দেখে সেখান থেকেই আসতে পারবেন টমছম ব্রীজ, তারপর এখানে।
১০) ইকো পার্ক
ফান টাউনে না নেমে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে নামতে পারেন ইকো পার্কে। অথবা ফান টাউন দেখেও যেতে পারেন। একই পথে পড়েছে পার্কটি। সবুজ ছায়া ঘেরা পার্কটি ক্লান্ত বিকেল আরসেমি করে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য চমৎকার।
অবস্থান: ফান টাউন থেকে একটু সামনে গিয়েই ইকো পার্ক।
এখানেই শেষ নয়। কুমিল্লায় আছে দেখার মতো আরও অনেক কিছু। সেসব জায়গা নিয়ে কথা হবে অন্য কোনো পোস্টে। আপনার ভ্রমণ মুখর দিনটি শুভ হওক।
0 Comments